বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
Bangladesh Medical University

Third successful bone marrow transplantation done at BSMMU

Event Image

Third successful bone marrow transplantation done at BSMMU

Event Date: April 3, 2024 | Category: Event
Location: BMT Unit, F-Block , BSMMU

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে

তৃতীয় বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন সফলভাবে সম্পন্ন

দেশের গরীব মানুষের পাশে দাঁড়ানোই উপযুক্ত কাজ হবে, নিশ্চিত করা হবে

বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট মানের চিকিৎসাসেবা: মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মোঃ নূরুল হক

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। রোগী বর্তমানে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লক এফ এর দ্বিতীয় তলায় বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন এ্যান্ড স্টেম সেল থেরাপি সেন্টারের উদ্যোগে আজ বুধবার ৩ এপ্রিল ২০২৪ সকাল ১১টায় আয়োজিত প্রেসব্রিফিং এ তথ্য জানান হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ সালাহউদ্দীন শাহ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মোঃ নূরুল হক।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মোঃ নূরুল হক বলেন, সিএমএইচ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন সেবা চালু আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমিত সুযোগ সুবিধার মধ্যেও উন্নতমানের বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন সেবা দেয়া হচ্ছে। মাত্র তিন লক্ষ টাকার মধ্যে অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। দেশের গরীব মানুষের পাশে দাঁড়ানোই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য উপযুক্ত কাজ হবে। দেশের রোগীরা এখানে এসে যাতে বিশ্বের সর্ব উৎকৃষ্ট চিকিৎসাসেবা পায় তা নিশ্চিত করা হবে। বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন এ্যান্ড স্টেম সেল থেরাপি সেন্টারে প্রত্যেক মাসে যাতে কমপক্ষে ৫ জন রোগীকে এই সেবা দেয়া যায় তাও নিশ্বিত করা হবে।

হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহ উদ্দিন শাহ বলেন, বর্তমান সময়ে অত্র হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল/বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন রক্ত রোগের আধুনিকতম চিকিৎসা সমূহের মধ্যে অন্যতম। সারা পৃথিবীতে লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, মায়েলোমাসহ রক্তের ক্যাস্নার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। লিউকেমিয়াসহ রক্তের ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের ক্ষেত্রেও স্থায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল, বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন। হেমাটোপয়েটিকস্টেমসেল, বোনম্যারোট্রান্স প্লান্টেশন প্রক্রিয়ামূলতঃ দুই ধরণের হয়ে থাকে। এলোজেনিক বোনম্যারোট্রান্স প্লান্টেশন প্রক্রিয়ায় রোগীর নিকটাত্মীয় বা অন্য দাতার শরীর থেকে স্টেম সেল, বোনম্যারো সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। রোগীকে উচ্চ মাত্রার কেমোথেরাপি, ক্যান্সারের ঔষধ এবং দাতার শরীর থেকে সংগৃহীত স্টেম সেল, বোনম্যারো রোগীর দেহে টিকে থাকার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করার লক্ষ্যে ঔষধ দেয়া হয়। অতঃপর রোগীর দেহে দাতার শরীর থেকে সংগৃহীতস্টেম সেল, বোনম্যারো প্রবেশ করানো হয়। অটোলগাস বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রক্রিয়ায় রোগীর দেহে উচ্চ মাত্রার কেমোথেরাপি বা ক্যান্সারের ঔষধ প্রদানের পূর্বেই রোগীর শরীর থেকেই স্টেম সেল (শরীরের স্বাভাবিক রক্ত উৎপাদনক্ষম কোষ গুলো) নির্দিষ্ট মাত্রায় সংগ্রহ করা হয়। অতঃপর রোগীর শরীরে উচ্চ মাত্রার কেমোথেরাপি বা ক্যান্সারের ঔষধ প্রয়োগ করা হয়। উচ্চ মাত্রার কেমোথেরাপি প্রদানের ফলে শরীরের ক্যান্সার কোষগুলো আরো গভীর ভাবে নির্মূলের আশা করা হয়, তবে এর পাশাপাশি স্বাভাবিক রক্ত উৎপাদনের কোষগুলো ও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তখন পূর্বে সংগ্রহকৃত স্বাভাবিক রক্ত উৎপাদন ক্ষমস্টেম সেল গুলো পুনরায় শরীরে প্রবেশ করানো হয়। এই উৎপাদনক্ষম কোষগুলো থেকে পুনরায় স্বাভাবিক রক্তের কোষগুলো তৈরি হয়ে থাকে। উচ্চ মাত্রার কেমোথেরাপি, ক্যান্সারের ঔষধ প্রয়োগ এবং উৎপাদনক্ষম কোষগুলো থেকে পুনরায় স্বাভাবিক রক্তের কোষগুলো তৈরি হবার মধ্যবর্তী সময়টুকুতে শরীরে রক্ত কোষের সংখ্যা অত্যন্ত কম থাকে এবং এ সময়টি অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। রক্তকোষের সংখ্যা অত্যন্ত কম থাকার কারণে এ সময় দূর্বলতা, বিভিন্ন সক্রামক রোগ, রক্তপাত হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত কম হবার কারণে এ সময়টুকু রোগীকে আলাদা কক্ষে অবস্থান করতে হয়। এ কক্ষে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। সংক্রামক রোগ এর সম্ভাব না হ্রাস করার লক্ষ্যে এ কক্ষে বহিরাগতদের প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত রাখতে হয়। উচ্চ মাত্রার কেমোথেরাপি বা ক্যান্সারের ঔষধ প্রয়োগ করার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে বমি, বমিভাব, মুখে ঘা, ব্যথা, খাবারে স্বাদ পরিবর্তন, পাতলা পায়খানা, বিভিন্ন সংক্রামক রোগ, চুল পড়ে যাওয়া, পেট ব্যথা, চামড়ার সমস্যা, দুর্বলতা এসব সমস্যা দেখা যেতে পারে। ঔষধ এবং অন্যান্য উপায়ে এ সমস্যা গুলো কমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। পাশাপাশি সংক্রমণ হ্রাসের লক্ষ্যে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে রোগীকে ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক বিরোধী ঔষধ দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু সকল রকম সতর্ক তা সত্ত্বেও চিকিৎসার যে কোন পর্যায়ে সংক্রামক ব্যধি সংক্রান্ত জটিল তা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রোগীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় বিভিন্ন রকম ঔষধ দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। পাশাপাশি এ সময়টিতে রোগীকে রক্ত বা রক্তের উপাদান দেয়া প্রয়োজন হতে পারে। উৎপাদনক্ষম কোষগুলো থেকে পুনরায় স্বাভাবিক রক্তের কোষগুলো তৈরি হতে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। পুনরায় তৈরি হবার পরে রক্তের কোষগুলো নির্ধারিত মাত্রায় পৌছানোর পর্যন্ত রোগীকে ভর্তি থাকতে হয়।

ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রক্রিয়া চলয়াকালীন সময়ে চিকিৎসা সংক্রান্ত জটিলতা হতে পারে। জটিলতা সমূহের চিকিৎসা করার পরেও যদি তা নিয়ন্ত্রণে না আসে তবে তা থেকে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। চিকিৎসা সম্পন্ন করার পরে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে রোগীকে প্রথম ১০০ দিন নিয়মিত ফলো আপে রাখতে হবে এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কেমোথেরাপি বা অন্যান্য চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। মাল্টিপলমায়েলোমা, লিউকেমিয়া, লিম্ফোমাএর ক্ষেত্রে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশনের মাধ্যমে রোগটিকে দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণে রাখার আশা করা যায়। বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবার পর ও সময়ের সাথে ক্যান্সারের পুনরায় আবির্ভাবের সম্ভাবনা থাকে । মায়েলোমা, লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, থ্যালাসেমিয়া, এপ্লাস্টিক এ নিমিয়াসহ রক্তের ক্যান্সার ও রক্তরোগের এবং অন্যান্য ক্যান্সার, ইমিউন ডিফিসিয়েন্সি রোগীদের চিকিৎসায় সহজে এবং সুলভে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশনের সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে এদেশের স্বাস্থ্যখাতে নবনির্মিত এ সেন্টার বড় ভূমিকা রাখবে এবং এর পাশাপাশিদেশের রক্তরোগ চিকিসকদের বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন বিষয়ের উচ্চতর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে বলে অধ্যাপক ডা. মোঃ সালাহউদ্দীন শাহ আশা প্রকাশ করেন এবং এ ব্যাপারে উপাচার্য মহোদয় এবং বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় ট্রান্সপ্লান্টসেন্টার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়াই এই সেন্টারের রূপকল্প। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের হেমাটোলজী বিভাগকে বিশ^মানের হেমাটোলজী চিকিৎসা কেন্দ্রে পরিণত করতে এবং এই বিশ^বিদ্যালয়কে সেন্টার অফ এক্সিলেন্সে পরিণত করতে নবনির্মিত বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।

প্রেসব্রিফিং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত রজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান দুলাল, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেঃ জেনাঃ ডা. মোঃ রেজাউর রহমান, মেডিসিন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী, সার্জারি অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ সালাহউদ্দীন শাহ, অধ্যাপক ডা. এবিএম ইউনুস, অধ্যাপক ডা. মোঃ আব্দুল আজিজ, অধ্যাপক ডা. মোঃ রফিকুজ্জামান খান, সহযোগী অধ্যাপক ডা. আমিন লুৎফুল কবির, সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারজানা রহমান, সহকারী অধ্যাপক ডা. মুনিম আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক ডা. মুজাহিদা রহমান, সহকারী অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক ডা. মোঃ গোলজার হোসেন, সহকারী অধ্যাপক ডা. জুলফিয়া জিনাত চৌধুরী, সহকারী অধ্যাপক ডা. মোঃ রায়িক রায়হান চৌধুরীসহ হেমাটোলজী বিভাগের চিকিৎসক, রেসিডেন্ট, নার্স, টেকনোলজিস্ট ও অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

© 2025 Bangladesh Medical University (BMU). All rights reserved. | Privacy Policy | Terms & Conditions