বিএমইউতে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্রোক কনফারেন্স ২০২৫ অনুষ্ঠিত
তীব্র স্ট্রোক কেয়ারের রূপান্তর ও পরবর্তী প্রজন্মের নিউরোইন্টারভেনশন পরিষেবার বিকাশে নতুন দিগন্ত
স্ট্রোক বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধি, স্ট্রোক প্রতিরোধ, স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বিরাট ভূমিকা রাখবে
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ)তে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্রোক কনফারেন্স ২০২৫ আজ ৯ নভেম্বর ২০২৫ইং তারিখে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারন্যাশনাল স্ট্রোক কনফারেন্স স্ট্রোক বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধি, স্ট্রোক প্রতিরোধ, তথ্য বিনিময়, আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ ও স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বিরাট ভূমিকা রাখবে। আন্তর্জাতিক এই কনফারেন্স উপলক্ষে ‘জরুরি স্ট্রোক কেয়ারের রূপান্তর ও বিএমইউতে পরবর্তী প্রজন্মের নিউরোইন্টারভেনশন পরিষেবার বিকাশ (Transformation of Acute Stroke Care and Development of Next Generation Neurointervention services in BMU)’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক অধিবেশনের আয়োজন করা হয়। এবারের সম্মেলনের স্লোগান ছিল ‘স্ট্রোকের জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া’। যেখানে বিশেষজ্ঞরা স্ট্রোক এখনো বাংলাদেশে মৃত্যু ও অক্ষমতার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এর বেশিরভাগই প্রতিরোধযোগ্য। বিএমইউ এর নিউরোলজি বিভাগের উদ্যোগে শহীদ ডা. মিলন হলে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএমইউর মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম। সভাপতিত্ব করেন সম্মানিত প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মোঃ আবুল কালাম আজাদ। উক্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন সম্মানিত প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ, রেজিস্ট্রার নজরুল ইসলাম, এনআইএনএসএন্ডএইচ এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, বিএইচআরইউটি এর পরিচালক (মেডিক্যাল এডুকেশন) অধ্যাপক গিডিঅন মালাওয়া (Prof. Gideon Malwa)। স্বাগত বক্তা ছিলেন নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ বাহাদুর আলী মিয়া।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএমইউর মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম বলেন, ইন্টারন্যাশনাল স্ট্রোক কনফারেন্স স্ট্রোক চিকিৎসার ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করবে। বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে বিএমইউতে স্ট্রোকের সর্বাধুনিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। আজকের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিদেশী বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি দেশের স্ট্রোকের উন্নত চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে।
অন্য বক্তারা স্ট্রোকের ম্যানেজমেন্ট, প্রতিরোধ, মাল্টি ডিসিপ্লিনিয়ারি ও কোলাবরেটিভ এপ্রোচ ইত্যাদির উপর গুরুত্বারোপ করেন।
এই সম্মেলন ছিল মূলত গণসচেতনতা বৃদ্ধি, সময়োপযোগী চিকিৎসা হস্তক্ষেপ, জীবনধারার ইতিবাচক পরিবর্তন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার এক গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশ। বিশেষজ্ঞরা জানান, চিকিৎসা বিজ্ঞানে অগ্রগতি সত্ত্বেও জনসচেতনতা এখনো অনেক কম। বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ এখনো স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করতে পারেন না, ফলে সাহায্য চাইতে দেরি হয় এবং অনেক রোগী বাঁচার সুযোগ হারান। তারা বলেন, স্ট্রোক এর ক্ষেত্রে FAST সংক্ষিপ্ত রূপটি সবার জানা থাকা উচিত। যেমন মুখ ঝুলে পড়া (Face drooping), বাহু দুর্বলতা (Arm weakness), কথা বলতে অসুবিধা (Speech difficulty), জরুরি পরিসেবায় দ্রুত ফোন করা (Time to call emergency services)। প্রাথমিকভাবে এই রোগ সনাক্তকরতে পারলে জীবন এবং মস্তিষ্ক দুটোই বাঁচায়। স্ট্রোকের ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে প্রতি মিনিটই মূল্যবান। বিশেষজ্ঞরা আরো জানান, আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সময়মতো শুরু করা গেলে রোগীর জীবন ও মস্তিষ্ক রক্ষা করা সম্ভব। দেশের রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসা দিতে সক্ষম এমন বিশেষায়িত স্ট্রোক কেয়ার সেন্টার দেশের প্রতিটি অঞ্চলে গড়ে তোলা এখন সময়েরই দাবি।
সম্মেলনে বিশেষজ্ঞগণ জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রায় ৮০ শতাংশ স্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য বলে উল্লেখ করেন। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস পরিহার এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা মোকাবিলায় সম্প্রদায়-স্তরের হস্তক্ষেপ করা জরুরি। স্ট্রোক প্রতিরোধের শিক্ষা স্কুল থেকে কর্মক্ষেত্র, এমনকি নগর পরিকল্পনা পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সম্মেলনে বক্তারা বিশ্বব্যাপী গাইডলাইন সমন্বয়, তথ্য বিনিময় এবং আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ-এর ওপর জোর দেন। বৈশ্বিক সহযোগিতা ছাড়া স্ট্রোক প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয় বলেও উল্লেখ করেন। বাংলাদেশে স্ট্রোক কেয়ার ব্যবস্থার রূপান্তর এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের নিউরোইন্টারভেনশন পরিষেবার বিকাশে এই সম্মেলন নতুন এক মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে বলেও তারা উল্লেখ করেন।
সম্পাদনা: ডা. সাইফুল আজম রঞ্জু। ছবি: মোঃ আরিফ খান। নিউজ: প্রশান্ত মজুমদার।