বিএমইউতে জুলাই ওমেন্স উপলক্ষে র্যালি, আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
জুলাই গণঅভ্যুত্থান নির্ভয়ে প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোয় চিরকাল প্রেরণা যোগাবে: অধ্যাপক সাহেবা আখতার
ব্যাক্টেরিয়া ভাইরাসরূপী ফ্যাসিস্টদের রুখতে ঐক্য ধরে রাখতে হবে: বক্তারা
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ)’র উদ্যোগে জাতীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে জুলাই ওমেন্স ডে উপলক্ষে র্যালি ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীদের অবদান নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভা আজ ১৪ জুলাই ২০২৫ইং তারিখে শহীদ ডা. মিলন হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকালে বিএমইউর বি ব্লকের সামনে থেকে মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম নেতৃত্বে একটি র্যালি বের হয়। র্যালিতে সম্মানিত প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরগণ, কোষাধ্যক্ষ মহোদয়সহ বিএমইউর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, সেবিকাবৃন্দ ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
র্যালি শেষে বি ব্লকের শহীদ ডা. মিলন হলে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএমআরসি সম্মানিত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাহেবা আখতার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মহিলা বিভাগের সেন্ট্রাল পলিটিক্যাল উইং এর সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবা চৌধুরী সুইট। সভাপতিত্ব করেন মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম। উদ্ভোধনী বক্তব্য রাখেন বিএমইউর সম্মানিত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার। বিএমইউর রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মোঃ নজরুল ইসলাম এর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জুলাই বীর শহীদ মোঃ আরিফের বাবা মোঃ বুলবুল কবির, শহীদ শ্রাবণ গাজীর মা শাহনাজ বেগম, বিএমইউর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ মুজিবুর রহমান হাওলাদার, অধ্যাপক ডা. জাহানারা লাইজু, ডা. ফারজানা ইসলাম রূপা, উপ-রেজিস্ট্রার সাবিনা ইয়াসমিন, ডা. জাকিয়া সুলতানা নীলা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতা পাঠ করেন ডা. শাহ আজিজ। অনুষ্ঠানে জাগরণমূলক বিভিন্ন সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএমআরসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাহেবা আখতার বলেন, মা জাতিকে আমরা যেমন ভালোবাসি আবার অবহেলাও করি। মায়ের জাতি নারীরা যাতে অবহেলিত না হয়, যেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে। জুলাই ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের মাসে আমি ঘরে বসে থাকিনি, প্রতিদিন আমি রাস্তায় বের হয়েছি। জুলাই ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান হলো নির্ভয়ে প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অফুরন্ত সাহস। এই গণঅভ্যুত্থান অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য চিরকাল প্রেরণা যুগিয়ে যাবে। জুলাই আন্দোলনে নারীরা যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, অবদান রেখেছেন, তা নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীদের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। নারীরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন। ফলে বাংলাদেশ আজ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে। তবে গণঅভ্যুত্থানে যারা ছাত্র জনতার উপর হামলা করে হত্যাকান্ড চালিয়েছে আজও তাদের বিচার হয়নি। অবশ্যই তাদের বিচার হতে হবে। ধর্ষণের মতোও ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনারও বিচার হতে হবে। দেশটা সবার, তাই আমাদের সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে রক্ষা করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মহিলা বিভাগের সেন্ট্রাল পলিটিক্যাল উইং এর সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবা চৌধুরী সুইট বলেন, জুলাই বিপ্লব ছিল একটি ইউনিক রেভুলেশন। সর্বস্তরের মানুষ এই বিপ্লবে অংশ নিয়েছিল। ফলে দেশটা ১৬ বছরের নিষ্পেষণ থেকে মুক্ত হয়েছে। বাক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পবিত্র ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, ক্ষমতার পালা ঘুরিয়ে দিলাম। জুলাই বিপ্লবেও যেনো তারই প্রতিফলন ঘটেছে। বিভেদ নয়, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তা না হলে ফ্যাসিস্টরা আবার মাথাচাড়া দিবে। ব্যাক্টেরিয়া ভাইরাসরূপী ফ্যাসিস্টদের রুখতে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। জুলাই গণহত্যার বিচার অবশ্যই হতে হবে। বর্তমানের চাঁদাবাজ, ধর্ষণের মতো ঘটনা সকলে মিলে রুখতে হবে। নৈতিকতা ও নৈতিক শিক্ষার উপর অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে।
মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারী ও শিশুদের অংশগ্রহণ ছিল অসাধারণ। ফলে ফ্যাসিবাদ সরকারের পতন হয়েছে। তবে এখন রণক্লান্ত হলে চলবে না। দেশটাকে সামনে দিকে এগিয়ে নিতে হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে নেতৃত্ব দিতে হবে। রোগীরা যাতে উন্নত চিকিৎসা পায়, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে যাতে বিশ্বের বুকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা যায় সেটা বাস্তবায়ন করতে পারলেই জুলাই শহীদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে।
উদ্ভোধনী বক্তব্যে বিএমইউর সম্মানিত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কিভাবে জুলাই বিপ্লবের পরিণত হলো এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেণ। তিনি বলেন, জুলাই চেতনা হলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে নবজাগরণের অফুরন্ত প্রেরণা। এই আন্দোলনে ছাত্রীরা, গৃহিনীরা ও মায়েরা অসামান্য অবদান রেখেছেন। জুলাই আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে এবং যারা শহীদ হয়েছেন তাদের হত্যার বিচার দ্রুত সমাপ্ত করতে হবে।
বিএমইউর সম্মানিত প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের যারা স্বজন হারিয়েছেন তাদের বেদনা শুধু তারাই বুঝতে পারেন। ২০২৪ জুলাই ছিল এক বিভীষিকাময় অধ্যায়। ওই সময়ে মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা ছিল না। সে সময়ে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, একজন ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, এসব ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিএমইউর ডেন্টাল অনুষদেও সম্মানিত ডিন সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাখাওয়াৎ হোসেন সায়ন্ত, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ডা. শেখ ফরহাদ, পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) খন্দকার শফিকুল হাসান রতন, অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ডা. মোঃ সাইফ উদ্দীন নিসার আহমেদ, অতিরিক্ত পরিচালক নাছির উদ্দিন ভূঁঞা, অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ বদরুল হুদা প্রমুখসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, সেবিকাবৃন্দ, কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সম্পাদনায়: ডা. সাইফুল আজম রঞ্জু। ছবি: মোঃ আরিফ খান। নিউজ: প্রশান্ত মজুমদার।