বিএমইউতে ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল সেমিনার অনুষ্ঠিত: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের ৮২.৫ শতাংশ বিষণœতায় ভুগছেন

বিএমইউতে ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল সেমিনার অনুষ্ঠিত: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের ৮২.৫ শতাংশ বিষণœতায় ভুগছেন

18 Aug, 2025 09:00 AM - 18 Aug, 2025 12:00 PM |

বিএমইউতে ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল সেমিনার অনুষ্ঠিত
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের ৮২.৫ শতাংশ বিষণœতায় ভুগছেন 
মাইলস্টোন ট্রাজেডির শিকার ছাত্রছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার উপর গুরুত্বারোপ
বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি (বিএমইউ)তে ‘বিয়ন্ড দ্যা হেডলাইনস: মেন্টাল হেলথ কন্সিকোয়েন্সেস অফ দ্যা জুলাই আপরাইজং এন্ড মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি (Beyond the headlines. Mental health consequences of the July uprising and milestone tragedy)’ শীর্ষক ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ১৮ আগস্ট ২০২৫ইং তারিখ সোমবার এ ব্লক অডিটোরিয়ামে ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল সেমিনার সাব-কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এই সেমিনারে জানানো হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মধ্যে ৮২.৫ শতাংশ বিষণœতায় ভুগছেন এবং তীব্র আঘাত পরবর্তী মানসিক চাপে ভুগছেন ৬৪ শতাংশ মানুষ। আর মাইলস্টোন স্কুল এ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত কারণে সৃষ্ট ট্রাজেডির শিকার ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবকদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ ও দ্রুত মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদানের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ এই সেমিনারে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন বিএমইউ এর সম্মানিত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার। গবেষণালব্ধ বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মনোরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোর্শেদ ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শামসুল আহসান। সেন্ট্রাল সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সেন্ট্রাল সাব-কমিটির চেয়ারপারর্সন অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেসা এবং সঞ্চালনা করেন কমিটির সদস্য সচিব সহযোগী অধ্যাপক ডা. খালেদ মাহবুব মোর্শেদ মামুন।
সেমিনারে বিএমইউ এর সম্মানিত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপনকারী সম্মানিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও গবেষক দ্বয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ট্রমা, ভায়ালেন্স, সেই সাথে মেন্টাল ইলনেস প্রতিরোধের জন্য পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন। একই সাথে মানসিক স্বাস্থ্যকে অবহেলা না করে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সংশ্লিষ্ট সকলে আরো দায়িত্ববান ও যতœশীল হতে হবে।
বিএমইউ এর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোর্শেদ ‘ইম্প্যাক্ট অফ ট্রমা এ্যান্ড ভায়োলেন্স এমং চাইল্ড এ্যান্ড এডোলোসেন্ট পপুলেশন’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন, শৈশবের ট্রমা ও সহিংসতা শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ ও দ্রুত মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা দিলে দীর্ঘমেয়াদী মানসিক রোগ ও আচরণগত সমস্যাগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা শিশুর মানসিক অবস্থা মূল্যায়ন করেন, সাইকোলজিক্যাল ফাস্ট এইড প্রদান করেন, প্রমাণভিত্তিক থেরাপি প্রয়োগ করেন, প্রয়োজনে ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসা ব্যবস্থা সমন্বয় করেন এবং পরিবার, শিক্ষক ও কমিউনিটিকে নিয়ে সমন্বিত সহায়তা ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। প্রকৃতপক্ষে, সহানুভূতিশীল পরিবার, সচেতন শিক্ষক এবং নিরাপদ সমাজ একসাথে কাজ করলে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য শক্তিশালী সুরক্ষা তৈরি হয়। তিনি বলেন, অভিভাবক, শিক্ষক ও যতœদাতাদের আহ্বান জানাই শিশুর মানসিক কষ্ট বা পরিবর্তন লক্ষ করলে দেরি না করে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। দ্রুত হস্তক্ষেপ মানে ভবিষ্যতের জটিলতা প্রতিরোধ। মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীরা শুধু চিকিৎসকই নয়, তারা শিশুদের জন্য সহায়ক, পথপ্রদর্শক এবং ভবিষ্যৎ রক্ষাকারী।
বিএমইউ এর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শামসুল আহসান  ‘মেন্টাল হেলথ ইম্প্যাক্ট অফ ভায়োলেন্স এ্যান্ড ট্রমা’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মধ্যে বিএমইউ, নিটোর এবং এনআইইউ তে  ভর্তি হওয়া ২১৭ জন রোগীর মাঝে বিষণœতার হার ৮২.৫ শতাংশ এবং পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার বা তীব্র আঘাত পরবর্তী মানসিক চাপে ভোগা মানুষের হার ৬৪ শতাংশ। তাদের মধ্যে  অনেকই বিষণœতা ও তীব্র আঘাত পরবর্তী মানসিক চাপ এই উভয় সমস্যায় ভুগছেন। আহতদের মধ্যে যারা গ্রামীণ এলাকার রোগী তারা নিজেদেরকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন ও তারা অধিকমাত্রায় উদ্বিগ্ন। কারণ তাদের ধারণা যে, হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার পরে তারা যথাযথ চিকিৎসাসেবা পাবেন না। সেই কারণে সার্বজনীন শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে তৈরি করা জরুরি।   
মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি সম্পর্কে তিনি বলেন, মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে  যারা ভুগছেন তাদের জন্য ইতোমধ্যে  বিএমইউ, ডিএমসিএইচ, এনআইএমএইচ, সাজেদা ফাউন্ডেশন, ব্রাক এর সমন্বয়ে মানসিক স্বাস্থ্য টিম গঠন করা হয়েছে। এই বিশেষজ্ঞ টিম প্রাথমিক প্রতিরোধের উপর কাজ করবে, বিশেষ করে যাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হয় নি; তাদের যাতে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা না হয়; সেদিকে মনোনিবেশ করবেন। এক্ষেত্রে কাউন্সিলিং, গ্রুপ সেশন ও প্রয়োজনে কিছু ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। আর যারা বার্ন ভিক্টিম, ইনজুরড তাদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা নিরূপন করা ও চিকিৎসা দেয়া হবে। আর পূর্বে থেকেই যদি কারো মানসিক সমস্যা থাকে তাহলে সেটা যাতে আর বৃদ্ধি না পায় সেদিকে গুরুত্ব দেয়া। সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শামসুল আহসান আরো জানান,  মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে আক্রান্তদের মানসিক সহায়তার জন্য হটলাইনে সেবা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং বিএমইউর ডাক্তাররাও এর অংশ। সবার ও সকল প্রচেষ্টার একটাই লক্ষ্য তা হলো মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির শিকার ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবকদের সাইকোথেরাপিসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা।  
সম্পাদনায়: ডা. সাইফুল আজম রঞ্জু। ছবি: মোঃ আরিফ খান। নিউজ: প্রশান্ত মজুমদার।