বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে  বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস ২০২৫ উদযাপিত

বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস ২০২৫ উদযাপিত

09 May, 2025 12:00 AM - 08 May, 2025 10:00 AM |

বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ)
বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস ২০২৫ উদযাপিত

রোগ প্রতিরোধ ও সমন্বিত চিকিৎসার উপর গুরুত্বারোপ


রক্তের পাশাপাশি ওষুধ দিয়েও চিকিৎসা শুরুতে নতুন আশার আলো

বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ)-তে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া ২০২৫ উদযাপিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে সকাল ৯টায় বিএমইউর বি ব্লক ফোয়ারার সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়ে টিএসসি, ডি ব্লক, সি ব্লক হয়ে কেবিন ব্লকের সামনে গিয়ে শেষ হয়। আজ বৃহস্পতিবার ৮ মে  ২০২৫ইং তারিখে প্রধান অতিথি হিসেবে বেলুন উড়িয়ে র‌্যালির শুভ উদ্বোধন করেন সম্মানিত প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ মুজিবুর রহমান হাওলাদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন সম্মানিত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোঃ আতিয়ার রহমান। এতে সভাপতিত্ব করেন শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ আনোয়ারুল করিম। র‌্যালিতে শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগ, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, রেসিডেন্ট ও নার্সবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও র‌্যালিতে হেমাটোলজি সোসাইটি অফ বাংলাদেশ এর নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো সকলের সম্মলিত প্রচেষ্টা, থ্যালাসেমিয়া রোগীর সু-চিকিৎসা (Together for Thalassemia Uniting Communities, Prioritizing Patients)।


প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে গণমানুষকে সচেতন করাসহ প্রতিরোধের পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এই রোগ প্রতিরোধে স্কুল পর্যায়ে সচেতনেতা ছড়িয়ে দিতে হবে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্তরোগ সংক্রান্ত গবেষণাকে তরান্বিত করা হয়েছে। বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট (বিএমটি) সেন্টার চালুর কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েছে। ইতোমধ্যে এই বিষয়টি একনেকে পাশ হয়েছে।  পূর্ণাঙ্গভাবে বিএমটি চালু হলে রক্তরোগ সংক্রান্ত অনেক রোগীর চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হবে না।


বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি জেনেটিক ডিজিজ। এই রোগ প্রতিরোধে থ্যালাসেমিয়ার দুই বাহকের মধ্যে বিবাহ বন্ধ করা প্রয়োজন। স্ক্রীনিংয়ের মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার বাহক চিহ্নিত করা সম্ভব। আবার গর্ভাবস্থায়ও অনাগত শিশুটি থ্যালাসেমিয়ার রোগী কিনা তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। সর্বোপরি যে সকল থ্যালাসেমিয়া রোগী রয়েছে তাদের সঠিক, উন্নত ও সহজ চিকিৎসাসেবাকে নিশ্চিত করতে হবে।

শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ আনোয়ারুল করিম বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের চিকিৎসার নতুন আশার আলো হলো রক্তের পাশাপাশি ওষুধ দিয়েও রোগীদের চিকিৎসাসেবা শুরু হয়েছে। ওষুধ দিয়েও এই রোগীদের চিকিৎসা করা সম্ভব এবং প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যাচ্ছে। থ্যালাসেমিয়া একটি জন্মগত রোগ। রোগীরা রক্তশূণ্যতায় ভোগে। অনেক সময় রক্তের অভাবে মারা যায়। এই ধরণের রোগীদেরকে সুস্থ করার জন্য বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন করা প্রয়োজন। যা বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে সঠিক দাতার অভাব, চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতা ও চিকিৎসাসেবা ব্যয় বহুল হওয়ায় (বিএমটি) করা সম্ভব হয় না। তাই রোগীদেরকে সমগ্র জীবন রক্তের উপর নির্ভর করেই বেঁচে থাকতে হয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজন নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন। কিন্তু নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন জটিলতায় রোগী পুরোপুরি সুস্থ জীবন পায় না। বাংলাদেশে ৬০ থেকে ৮০ হাজার থ্যালাসেমিয়ার রোগী রয়েছে। ৬ থেকে ১০ রোগী প্রতিবছর জন্ম নিচ্ছে। দেশে থ্যালাসেমিয়া বাহকের সংখ্যা দেড় থেকে দুই কোটি। থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে দুই বাহকের মধ্যে বিবাহ বন্ধ করতে প্রয়োজনে সরকারকে আইন করতে হবে। তাহলে থ্যালাসেমিয়ার অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব। একজন থ্যালসেমিয়ার রোগী  পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ঝঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যায়ের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের বহির্বিভাগে প্রতি মাসে প্রায় ৫ শত শিশু রোগীর চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। আজকের দিবেসের বিশেষত্ব হলো বিএমইউতে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ও সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ ঐক্যবদ্ধভাবে চিকিৎসাসেবা দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

সম্পাদনা: ডা. সাইফুল আজম রঞ্জু। ছবিঃ মোঃ আরিফ খান। নিউজ: প্রশান্ত মজুমদার।

Error
500

Whoops, something went wrong on our servers.